'নক্সীকাঁথার মাঠ' পেয়ে বসেছে।
জসীমউদদীন যে তুলিতে রূপাইকে এঁকেছেন সে তুলি খুঁজেতে গিয়ে বারবারই মনে পড়ে "কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি- মুখের মায়া
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মতো বহু দুখান সরু
গা খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু। "
মনে গেঁথে আছে সে সব। সেখানে গ্রামবাংলার প্রকৃতির কলো ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা ধানের পাতা, কচি মুখের অবুঝ মায়া, রোদে পোড়া কৃষক রূপাই পৃথিবীর সব কিছু জয় করেছে। আছে সবই আগের মতোই। বৈষ্ণব কবিরাও তমাল তরু- ই বলেন।
অস্তিত্বঃ কিন্তু সে কোথায়?
তমাল কিন্তু তরু নয়। সে মাঝারি আকারের অরন্যক বৃক্ষ। তাকে কিন্তু খুব একটা দেখা যায় না। এখানে তমাল একটি মহা বিপন্ন দেশীয় প্রজাতির বিরল গাছ।
২০১২ সালে প্রণীত বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে তমাল গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত।
তমাল গাছ প্রথম দেখেছিলাম দিনাজপুরের রাজবাড়ি কালিয়া কান্তজীর মন্দিরে। এরপর আনন্দমোহন কলেজে। আছে মীরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে, রমনা, বপনাপোল পাটাবাড়ি আশ্রমে আছে এ গাছ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যত্ন করে লাগানো কিছু গাছ রয়েছে।
আরও একটি প্রাচীন তমাল গাছ রয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদীনির মন্দির চাতালে।
চিরসবুজ এই গাছের আদি বাড়ি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়।
কে যেন লিখেছিলেন কবিতায় - "একগুচ্ছ স্নিগ্ধ অন্ধকারের তমাল অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায় একটি প্রগাঢ নিকুঞ্জ।"
তমাল গাছের শাখা-প্রশাখা ছড়ানো। ছত্রাকৃতি। চিরসবুজ তমালের বাকল ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পুরু, আঠা নির্গত হয়। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ আর উজ্জ্বল, আকারে বড়ো। পাতাগুলো মাটি অবনত। সাদা খসখসে পুরু পাপড়ির ফুল ফুটে বসন্তে। ফুলগুলো উভ-লিঙ্গিক। ফল গোলাকার, গাড় পীত বর্ণ। খাবার অযোগ্য।
ফল, বীজ ও বাকলে ঔষধি গুণ রয়েছে। এর কচি ডাল পানিতে পেষণ করে ফোঁড়ায় লাগালে উপশম হয়। কাঠ লালচে হলুদ, দৃঢ। আসবাবপত্র তৈরিতে কাজে লাগে।
বৈষ্ণব কাব্যে, লোকগীতিতে তমালের মর্যাদা বেশ উঁচুতে।
কৃষ্ণ কালো,
তমাল গাছের বাকলের রঙ কালো, সখানে বসেই বাঁশি তাজাতো কৃষ্ণ। তাই তো তমাল রাধিকার এতে প্রিয়। আর তাই পূজো-প্রণামে সে ধন্য।
তমালের উদ্ভিদ জাগতিক নাম : Diospyros montana | Diospyros cordifolia;
হেনা সুলতানা -

2 মন্তব্যসমূহ
এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুন